তাউহিদ ও রেসালাত / www.drmiaji.com

Please visit www.drmiaji.com for update

সব মানুষ কি মাটির তৈরি?


==================
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

 ——-
بسم الله الرحمن الرحيم
اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد وبارك وسلم
মানব সৃষ্টি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বিষদ বর্ণনা করেছেন। এসব বর্ণনা থেকে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়। মুর্খরা এ আয়াতগুলো না বুঝে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে আর নাস্তিকেরা এর সঠিক মর্মার্থ অনুধাবন না করে হাসি তামাশা করে বলে যে আল্লাহ কুরআনে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে একেক স্থানে একেক রকম কথা বলেছেন, নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ পাক একদিকে হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির কাহিনী তুলে ধরেছেন। হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে অন্য নরনারী তৈরির কথা বলেছেন। অন্য দিকে আবার মাতৃ গর্ভে ভ্রূণ বেড়ে উঠার ব্যাপারে দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক মহা বিস্ময়। ওইসব আয়াতের সামঞ্জস্যতা বর্ণনা করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ পাক তৌফিক দিলে ধীরে ধীরে সব আয়াতের মর্মার্থ বিশ্লেষণ করা হবে।

মহান আল্লাহ পাক একাধিক স্থানে বিস্তারিতভাবে বলেছেন তিনি মানুষকে মাটি থেকে তৈরি করেছেন। আবার কোথায়ও বলেছেন, মানুষ সৃষ্ট ঠনঠনে মাটি থেকে, কাদামাটি থেকে, বীর্য থেকে, পানি থেকে, জমাট রক্ত থেকে, রূহ থেকে। এগুলোর সমন্বয়ের জন্যে প্রয়োজন বিখ্যাত তাফসীরকারকগণের ব্যাখ্যার আলোকে সঠিক আলোচনা।

বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে প্রশ্ন করি সব মানুষ কি মাটির তৈরি? কেউ যদি ঢালাও ভাবে বলে হ্যাঁ, সব মানুষ মাটির তৈরি। তাহলে প্রশ্ন হযরত মা হাওয়া আঃ কি মাটির তৈরি? হযরত ঈসা রুহুল্লাহ (আঃ) মাটির তৈরি? হযরত আদম আঃ এর ক্ষেত্রে যেমন সব আয়াত প্রযোজ্য নয়, তেমনি সব মানুষের ক্ষেত্রে ‘মাটির তৈরি’ কথাটিও প্রযোজ্য নয়। গৎবাঁধা ‘মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট’ বললে কিছু আয়াতকে অস্বীকার করা হয় আবার সব আয়াতকে শাব্দিক অর্থে হযরত আদম (আঃ) এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হয়, নাউজুবিল্লাহ। আর এ ব্যাপারে নবী করীম ﷺ কঠোর সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজ ঠিকানা বানিয়ে নেয়।” [তিরমীযি শরীফ – ২৯৫১]

মহান আল্লাহ পাক অতি চমৎকারভাবে মানব জাতির সৃষ্টির কথা একটিমাত্র আয়াতে তুলে ধরেন এভাবেঃ

“হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান না থাকে।” (সূরা হাজ্জ, আয়াত ৫)
এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হচ্ছে আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। এরপর আবার বলা হচ্ছে বীর্য থেকে, এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অবস্থা পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ কিংবা অপূর্ণাঙ্গ শিশু হিসেবে পৃথিবীতে আনয়নের কথা। এখানে স্পষ্টতঃই বোঝা যাচ্ছে যে পরের ধাপগুলো কেবল আদমসন্তানদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলন থেকে পুরো সময়টাকে বোঝানো হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) কে যেমন বীর্য বা জমাট রক্ত থেকে তৈরি করা হয়নি, ঠিক তেমনি অন্য সব মানুষকে মাটি থেকে তৈরি করা হয়নি। অথচ আল্লাহ পাক কিন্তু আলোচ্য উক্ত আয়াতে পুরো মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে এ ঘোষণা দিচ্ছেন। প্রায় সব তাফসীরকারগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন। দেখুন তাফসীর-এ আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী, ইবনে কাসীর, ইমাম কুরতুবী, কাঞ্জুল ঈমান (আ’লা হযরত ইমাম আহমেদ রেজা খান রাহমাতুল্লাহ আলাহুম আজমাঈন)।

সূরা নিসায় আল্লাহ পাক আরও পরিষ্কার করে ঘোষণা করছেনঃ “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর সঙ্গীনীকে (বিবি হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” (৪:১)
এই আয়াতের পর আর সন্দেহ রইলোনা যে আল্লাহ এক ব্যাক্তিকেই মাটি থেকে তৈরি করেছেন। আর তাঁর থেকে তাঁর সঙ্গিনীকে এবং তাঁদের দু’জন থেকে সমগ্র মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। সব মানুষ মাটির তৈরি একথা বলা বা এধরণের বিশ্বাস পোষণের দ্বারা সূরা হাজ্জের ৫ নং আয়াতের শেষের অংশকে অস্বীকার করা হয়। সমগ্র মানব জাতির মূল অর্থাৎ আদি পিতা হলেন মাটির তৈরি। সবাই মাটি থেকে সৃষ্ট নয়। কুরআনের কোন একটি আয়াত বা কোন আয়াতের কিছ অংশকে অস্বীকার করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন।
“তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর?” (২:৮৫)
“এবং যাদেরকে আমি গ্রন্থ দিয়েছি, তারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তজ্জন্যে আনন্দিত হয় এবং কোন কোন দল এর কোন কোন বিষয় অস্বীকার করে।” (১৩: ৩৬)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কুরআন, হাদিস ও ইসলামকে জানার ও বোঝার তৌফিক দিন! আমরা সবাই যেন খাঁটি নবী (দঃ) প্রেমিক হয়ে জীবন যাপন করতে পারি। আমীন!

@@ সব মানুষ কি মাটির তৈরি? @@ [২য় পর্ব]
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

بسم الله الرحمن الرحيم
اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد وبارك وسلم
সব মানুষই মাটির তৈরি প্রমাণ করার জন্যে অনেকেই সূরা তোয়া-হা এর ৫৫ নং আয়াতটি উল্লেখ করে থাকেন। এই আয়াতে আল্লাহ পাক সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করে মানব সৃষ্টির কথা ঘোষণা করেন। দেখা যাক এর ব্যাখ্যায় মুফাসসীরগণ কী বলেন। মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, “এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।” (২০:৫৫)

এখানে মাটি থেকে সৃজন করা বলতে কি সব মানুষকে বুঝানো হয়েছে নাকি কেবল আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।

প্রথমেই তাফসীরে জালালাইন থেকে উদৃত করছি। বাংলা ভার্সনের ৪র্থ খণ্ডের ২৩১ নং পৃষ্ঠায় আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহঃ) লিখেন, “আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছি। এখানে সব মানুষকেই সম্বোধন করা হয়েছে। অথচ এক হযরত আদম (আঃ) ছাড়া সাধারণ মানুষ মৃত্তিকা দ্বারা নয়, বীর্য দ্বারা সৃজিত হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) -এর সৃষ্টিই কেবল সরাসরি মৃত্তিকা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ‘তোমাদেরকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃজন করেছি’ বলার কারণ এরূপ হতে পারে যে, মানুষের মূল এবং সবার পিতা হলেন হযরত আদম (আঃ), তাঁর মধ্যস্থতায় সবার সৃষ্টিকে মাটির সাথে সম্বন্ধযুক্ত করে দেয়া মোটেই অযৌক্তিক নয়।”

এবার আসি তাফসীর ইবনে কাসীরে। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) লিখেন, “মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর থেকেই তোমাদের সূচনা। কেননা, তোমাদের পিতা আদমের (আঃ) সৃষ্টি এই মাটি থেকেই।”

কানযুল ঈমানে ইমাম আহমাদ রেজা (রহঃ) এই আয়াতের পাদটীকায় লিখেন, তোমাদের আদি পিতামহ হযরত আদম (আঃ) কে তা থেকে সৃষ্টি করেছি।

অন্যান্য তাফসীরে ও এই একই অর্থ করা হয়েছে।

নবী করীম ﷺ এর একটি হাদিসও এই দাবীকে সমর্থন করে। তিনি বলেনঃ “তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি।”
(হাদীসটি সহীহ হিসেবে লা-মাজহাবী আলবানীর ‘সহীহুল জামে’ কিতাবে স্থান পেয়েছেঃ হাদিস নম্বর ৪৫৬৮)

@@ মা হাওয়া কিসের তৈরি? @@

যারা কুরআনের আয়াতের শাব্দিক অর্থ বিবেচনা করে সব মানুষ মাটি থেকে তৈরি বলে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, হযরত হাওয়া আঃ কিসের তৈরি? যদি বলেন তিনিও সরাসরি মাটির তৈরি তাহলে কুরআনের কিছু আয়াতকে অস্বীকার করা হবে আর উপরে উল্লেখিত হাদিসটি সহ অনেক সহিহ হাদিসের অবমাননা করা হবে। এবার দেখি আল্লাহ মা হাওয়ার সৃষ্টির ব্যাপারে কি বলেন।

“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর সঙ্গীনীকে (বিবি হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” (৪:১)

“অতঃপর তিনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর যুগল (হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন” (৩৯/৬)

নবী করীম ﷺ বলেনঃ “নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাকাই থাকবে। সূতরাং তোমরা নারীদের সাথে উত্তম আচরণ করবে।” [বুখারীঃ ৩০৮৫; মিশকাতঃ ৩২৩৮]

তাহলে উপরের দুইটি আয়াত আর একটি সহীহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হল সব মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট নয়। ওইসব বন্ধুরা ঈসা (আ) এর সৃষ্টি নিয়ে কি বলবেন?

@@ ঈসা (আঃ) কিসের তৈরি? @@

ঈসা (আঃ) কে ঈসা রুহুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত রুহের মাধ্যমে মানব সৃষ্টির নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে বিবি মরিয়ম (আঃ) এর গর্ভে সৃষ্ট হন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ

“তিনি (বিবি মরিয়ম) বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।” (৪:৪৭)

“অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ (হযরত জিব্রাঈল) প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। মরিইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি কখনো ব্যভিচারিণীও ছিলাম না ? সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।” (১৯:১৭-২২)

মতিউর রহমান আন-নজদি যিনি সৌদি বেতনভুক্ত এবং তাদের উপাধিপ্রাপ্ত একজন শাইখ, এর শিষ্যগণ আমার বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্য করে যে নবী ﷺ নূরের হলে উনি কি ফেরেশ্তার সন্তান? নাউজুবিল্লাহ! তারা কত বড় বেয়াদব যে নবী (দঃ) এর শানে এমন মন্তব্য করে বসে। তাদের বুক কাঁপেনা। আমার প্রশ্ন, নবী (দঃ) নূরের হলে তাঁকে ফেরেশ্তার সন্তান বলে তোমরা যে বেয়াদবি কর, তাহলে উত্তর দাও হযরত ঈসা (আ) কিসের তৈরি। কুরআন তো বলেছে আল্লাহ বিবি মরিয়মের ভেতরে রূহ ফুকে দিয়েছেন আর তাতে তিনি সৃষ্টি হয়েছেন। আদম সন্তানের সবাই যদি মাটির তৈরি হয় তাহলে ঈসা (আ) ও কি মাটির তৈরি? মা হাওয়া আঃ ও কি মাটির তৈরি? যতগুলো আয়াত মানুষ মাটির তৈরি বলে ঘোষণা করেছে, প্রায় সব মুফাসসীরগণের আলোচনা অনুসারে, তার সবগুলো দ্বারাই হযরত আদম (আ) কে বোঝানো হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে থেকে ঈমান ও আক্বীদাকে রক্ষা করার জন্য ঈমানী শক্তি দান করুণ। আর ভ্রান্ত সব মতবাদের মজাদার ফাঁদ থেকে বাঁচিয়ে রাখুক, আমীন!

[শেষ ও ৩য় পর্ব ইনশাল্লাহ আসছে আগামীকাল। ]
সৌজন্যেঃ ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

@@ সব মানুষ কি মাটির তৈরি? @@ শেষ অংশ
ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী
بسم الله الرحمن الرحيم
اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد وبارك وسلم
@@ মানুষ ৫ বস্তুর তৈরি @@

আগের দুই অংশের আলোচনায় কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয়েছে যে সব মানুষ মাটির তৈরি নয়। কুরআনের যেসব আয়াতে মানুষ মাটির তৈরি বলা হয়েছে তাঁর সবগুলো আয়াতেই হযরত আদম (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে। কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে মানুষ ৫ বস্তুর তৈরি যথাঃ মাটি (আদম আঃ), হাড় (মা হাওয়া), রূহ (হযরত ঈসা আঃ), বীর্য (অন্য সব মানুষ) এবং নূর (হযরত মুহাম্মাদ ﷺ)। ৩য় বা শেষ অংশে ইনশাল্লাহ আলোচনা করবো কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত মুহাম্মাদ ﷺ নূরের তৈরি।

@@ কুরআনের আলোকে @@

قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ

“তোমাদের কাছে একটি নূর বা উজ্জল জ্যোতি (মুহাম্মাদ দঃ) এসেছেন এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।” (৫:১৫)।

প্রায় সব মুফাসসিরীনে কেরাম একমত যে উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ “নূর” বলতে হযরত মুহাম্মাদ ﷺ কে বুঝিয়েছেন। কোন কোন মুফাসসীর নূর দ্বারা মুহাম্মাদ ﷺ কে বুঝালেও তাঁকে আলো হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ মুহাম্মাদ ﷺ এমন আলো যা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। কেউ কেউ আবার নূর বলতে কুরআনকেই বুঝান, অর্থাৎ তাদের ব্যাখ্যায় একই আয়াতে কুরআন দুইবার চলে আসে যা স্পষ্ট ভ্রান্তি।

অন্য স্থানে আল্লাহ এভাবে ঘোষণা দেনঃ “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” (৩৩:৪৫-৪৬)

সূরা তওবায় আল্লাহ তাঁকে আল্লাহর নূর বলে (نُورَ اللّهِ) অভিহিত করেন এভাবেঃ “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।” (৯:৩২)

সূরা ছফেও আল্লাহ প্রায় একইভাষায় ব্যক্ত করেনঃ “তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।” (৬১:৮)

তিনি যে নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ দৈহিক অবকাঠামোতে নূর তা কুরআনের আয়াতের সাথে সহীহ হাদীসে আরও পরিষ্কার ভাবে প্রমাণিত হয়।

হযরত জাবের রাঃ এর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি ﷺ জবার দেন এভাবেঃ

“হে জাবির! সমস্ত বস্তু সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্ তোমার নবীর নূরকে তাঁর আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমন করছিলো। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেসত্ -দোজখ, ফেরেশ্তা, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।” [হাদিসটি সহীহ, ইমাম বুখারির (রহঃ) এর দাদা ওস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) এর মুসান্নাফঃ ১৮; দেওবান্দি ওলামাগণ এই হাদিসটি তাদের বিভিন্ন কিতাবে সহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তবে ইদানিং আহলে হাদিস নামধারী ভণ্ডরা এই হাদিস সহ নবী ﷺ এর শানে অনেক সহিহ হাদিসকে জাল ও বানোয়াট বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে]

উপরের হাদিসের আলোকে দেওবান্দি কিছু ওলামা বলেন যে নূরে মুহাম্মাদী ﷺ সৃষ্টির শুরুতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর তা হল মোহরে নবুয়াত। তারা নবী ﷺ আপাদমস্তক নূর বিশ্বাস না করলে তাদের গুরু আশ্রাব আলী থানবি সাহেব বলে গেছেন, মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন আপাদমস্তক নূর। (দেখুন থানবি সাহেবের লিখিত কিতাব যার বাংলা “যে ফুলের খুশবুতে সাড়া জাহান মাতোয়ারা” অনুবাদ করেছেন মাওলানা আমিনুল ইসলাম।)

কিন্তু হযরত আয়েশা রাঃ এর একটি হাদিসে প্রমাণিত হয় যে নবী ﷺ আপাদমস্তক নূর ছিলেন।

হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, “আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করিম ﷺ এর কাপড় সেলাই করছিলাম। এমন সময় বাতিটি (কোন কারনে) নিভে গেল এবং সুচটি হারিয়ে ফেললাম। এরপর নবী করীম ﷺ অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুইটি খুজে পেলাম”। (আন- নে’মাতুল কোবরা- ৪১ পৃঃ)

কুরাআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে অনেকে প্রমাণের চেষ্টা করে যে নবী ﷺ আমাদের মত মানুষ। নাউজুবিল্লাহ। সূরা কাহফ ও সূরা ইউসুফে আল্লাহ তাঁকে ঘোষণা করতে বলেছেন যে তিনি সুরতে আমাদের মতই মানুষ। তাঁরা শুধু কুরআনের আয়াত মানে, রাসুল ﷺ এর হাদিস মানে না। হাদিস না মানলে যে ভ্রান্ত হতে হয় তার প্রমাণ নিম্নের হাদিসটি।

“আমি তোমাদের আকৃতির উপর নই, আর আমি তোমাদের সাদৃশ্যও নই এবং তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছে (অর্থাৎ কেহ নাই)।” (বোখারীঃ ১৮৩৭-৪৩, মুসলিমঃ ২৪২৯-৩৮, তিরমীজী শরীফ ১ম খণ্ড পৃঃ ৯৭)।

অনেক ওহাবী সালাফী আহলে হাদিস ভণ্ড নবী ﷺ কে আমাদের মতই মানুষ মনে করে থাকে। এটা তাঁর শানের ক্ষেত্রে চরম বেয়াদবি। কোন মানুষই তাঁর মত হতে পারেনা। তিনি নূরে মুজাসসাম, সায়্যেদুল কাউনাইন, সায়্যেদুস সাকালাইন, ইমামুল মুরসালীন, শাফেয়ুল মুজনেবীন। তাঁর শরীর মোবারক থেকে মেশক আম্বরের গন্ধ আসত। আমাদের গা থেকে কি আসে? তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া ছিল না যা খৃষ্টান পাদ্রী বাহিরা অবলক করে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি আখেরি জামানার নবী হবেন। আফসোস মুসলমান নামধারী হয়েও তারা নবী ﷺ কে চিনতে পারল না। দেখুন সহীহ হাদিস কী বলেঃ

হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক ﷺ ছিলেন মনি মুক্তার মতো, যখন পথ চলতেন পূর্ণ তারুন্যের সাথে চলতেন। আমি নবীজীর হাতের তালুর মতো কোমল না কোনো মোটা রেশমী কাপড় দেখেছি না কোনো পাতলা। আর আমি এমন কোনো মেশক আম্বরের খুশবো দেখিনি যা তাঁর শরীর মোবারকের সুগন্ধির চাইতে অধিক খুশবো। { বুখারী শরীফ- ৪র্থ খন্ড, কিতাব ৫৬, হাদিস ৭৬১; মুসলিম শরীফ এবং অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও হাদিসটি সংকলিত হয়েছে }

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভ্রান্ত আহলে হাদিস নামধারী ওহাবী সালাফীদের ঈমান হরণকারী ফাঁদ থেকে রক্ষা করুণ। আমীন। নবী ﷺ আপাদমস্তক নূর এ নিয়ে আরও অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে এই নিয়ে আরও লেখা আসবে।

One comment on “সব মানুষ কি মাটির তৈরি?

  1. Homayon
    January 3, 2021

    ভাই তাহলে তো ক্লিয়ার হলাম না ইসা আঃ কিসের তৈরি???

    Like

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Blog Stats

  • 86,726 hits

Calendar

July 2015
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Most Read posts

Tags

allama abdul jalil আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ আল্লামা আব্দুল জলিল আল্লামা আব্দুল জলিল আল্লাহকে দেখেছেন আহলে বাইত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আহলে হাদিস ইমাম জয়নুল আবেদীন ইমাম হুসেইন ইরাক ইলমে গায়েব ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ইয়াজিদ ঈদে মিলাদুন্নাবী ঈদে মীলাদুন্নাবী এজিদ এপ ওলী ওহাবীবাদ কা'বা কানজুল ঈমান কানজুল ঈমান ফ্রি ডাউনলোড কান্জুল ঈমান কারবালা কারামাত-এ-গাউসুল আজম কারামাতে গাউসুল আ'জম রাঃ কারামাতে গাউসুল আজম কালেমার হাক্বীক্বত কাশ্মীর কিয়াম কুরআন গিয়ারভি শরীফের ইতিহাস গিয়ারভী শরীফের ইতিহাস জিন্দা নবী নবী দঃ নবী দঃ কিসের তৈরি? নবী দঃ নূর নবী দুষমনী নবীপ্রেম নূর নূরনবী বদর যুদ্ধ বসনিয়া হারজেগবিনা বাংলাদেশ বাগদাদ বাট বাতিল ফের্কা বিদাত ভারত মক্কা-মদীনা-তায়েফ মদীনা শরীফ মসজিদে নববীতে ইফতার মাজার পাকা মাযার পাকা মিলাদ মীলাদ মুসলমান মুসলিম বিশ্ব মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক রহঃ যে ভুমি মুসলমানদের ছিল রওযা মুবারক রাসুল দঃ শবে কদর শাফায়াত শাহ নেয়ামত উল্লাহ শাহাদাত সন্ত্রাসবাদ সন্ত্রাসী সালাফী সালাফীবাদ স্পেন হাদিস হিন্দু-মুসলিম